September 25, 2023, 2:09 am
যশোর কলেজ (পরে নাম হয় ‘মাইকেল মধুসূদন কলেজ ’(এমএমকলেজ)-এর প্রতিষ্ঠাকালীন (১৯৪১) প্রথম যে ৪ জন ছাত্রী সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের একজন হলেন মনোয়ারা খাতুন। তিনিই ছিলেন একমাত্র মুসলিম ছাত্রী। কলেজে তাঁর সহপাঠীরা ছিলেন লীলা রায়, কল্যাণী দত্ত (সিভিল সার্জনের কন্যা) এবং শান্তি মুখার্জী। লীলা রায় এবং শান্তি মুখার্জী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করেন। বিবাহের পর মনোয়ারা খাতুন ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে আইএ, তারপর বিএ, বিএড এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পাশ করেন। মনোয়ারা খাতুনের জন্ম যশোর সদরের কাজীপুর গ্রামে। তার পিতার নাম লুৎফর রহমান। বৈবাহিক সুত্রে তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম ডাঃ কে আহম্মেদ। বাসা ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর পাড়ায়। ভাষা সৈনিক মনোয়ারা খাতুন ঝিনাইদহ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সমাজকর্ম ও সাহিত্য চর্চায় তিনি পারদর্শী ছিলেন।১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁদের পারিবারিক পরিবেশে হস্তাক্ষরে ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রভাতী’ প্রকাশিত হতো। মনোয়ারা খাতুন এবং তার বড় ভাই নুরুল ইসলামের লেখায় সমৃদ্ধ হয়ে পত্রিকাটি প্রকাশ হতো। মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘দীপিকা’ ম্যাগাজিনে তাঁর একটি লেখা প্রকাশ হয়েছিল। পরে শিক্ষকতা করেন। মনোয়ারা খাতুন সংসার জীবনে, সমাজসেবায় একনিষ্ঠ কর্মী হলেও বিচ্ছিন্নভাবে সাহিত্যচর্চা করেছেন। মুলত: অবসর জীবনে পর অভিজ্ঞতার আলোকে আত্নকাহিনীমুলক ও প্রবন্ধ ফিচার রচনা করেন। এতে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেছেন। তাঁর পান্ডুলিপিতে অধিকাংশ তারিখ দিয়ে জীবনলিপি আকারে বিন্যাস করা। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাবে প্রকাশ হয় ‘ছেলেবেলার ঈদ’। এছাড়া ‘ইতিহাসের পাতা থেকে’ নামে অপর একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর থেকে বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিক কার্যক্রমের প্রবন্ধটির মুল বিষয়। এছাড়া ‘ভাষা আন্দোলনের পটভূমি’ এবং ‘কেন মুক্তি পেলাম না’ রচনা করেন। তাঁর বড় পুত্র মঞ্জুর আহমেদ দৈনিক বাংলার কুটনৈতিক রিপোর্টার ছিলেন। এখন আমেরিকা প্রবাসি। তিনি দেশের নামি সাংবাদিক। দ্বিতীয় পুত্র মুস্তাক আহমেদ রঞ্জু জাপানি দুতাবাসে কর্মরত ছিলেন, ছোটপুত্র মাসুদ আহম্মেদ সনজু বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন। সনজু এখন পরিবেশবিদ ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতা। কন্যা মারুফা খানম লিলি কানাডায় স্বামীর সাথে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। এই মহিয়সি নারী সম্পর্কে এই প্রজন্মের অনেকেই জানেন না। দেশ ও জাতির কল্যানে মনোয়ারা খাতুনের বিরাট অবদান রয়েছে, বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে।
তথ্যসুত্র সাজেদ রহমান, সাংবাদিক দৈনিক জনকন্ঠ যশোর