September 25, 2023, 3:57 am
মোঃ মিজান হোসেন।
বিশেষ প্রতিনিধি। বরিশাল।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ আধাপাকা ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন চরফ্যাশনের ভূমিহীন ও গৃহহীন দরিদ্র পরিবার গুলো।ভূমিহীন পরিবার গুলো উপহারের ঘরে আশ্রয় পেয়ে এখন সবজি উৎপাদন, নদীতে মৎস্য আহরণ, হাঁস-মুরগি পালনসহ ক্ষেত খামারে কাজ করে নিশ্চিন্তে উপার্জন করে স্বচ্ছন্দে দিনাতিপাত করছে।
উপহারের ঘরে আশ্রয় পাওয়া পরিবার গুলো জানান, তারা কোনোদিন ভাবেননি মাথা গোঁজার মতো নিজেদের একটি ঠিকানা হবে। বিধবা ও পঙ্গু ঝর্ণা বেগম বলেন, তিন বছর পূর্বে স্বামীর মৃত্যুর পরে একমাত্র প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। মানুষের বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করে অতি কষ্টে জীবন যাপন করেছি। আকতার ফরাজি ও কোহিনূর বেগম বলেন,বিনা মূল্যে ঘরসহ জমি পেয়ে আমরা অনেক খুশি। উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের চর নুরুল আমিন ২নং ওয়ার্ডের অন্ধ কেরামত আলী (৬৭) ও মল্লিকা বিবি (৫৫) দুই শতাংশ জমিসহ আধাপাকা ঘর পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। জানা যায়, কেরামত আলী দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন।
১৯৭০ সালে প্রলয়ঙ্কারী বন্যা ও জলচ্ছ্বাসে তার পরিবারের সকলেই মারা যান। নদীগর্ভে তাদের জমিজমাও বিলীন হয়ে যায়। এতিম ও অসহায় কেরামত অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে পেট চালাতেন। পরে তিনি মল্লিকা বিবিকে বিয়ে করে চরফ্যাশনের নীলকমলে মানুষের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবনযাপন করেন।
তিনি বলেন, তার দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে ১০বছর বয়সে তার মেয়েটি মারা যায়। জ্বরে অসুস্থ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অন্ধ হয়ে যান বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। মল্লিকা বিবি বলেন, ছেলে দিনমজুরের কাজ করে অতিকষ্টে আমাদের নিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস করে। দারিদ্রের চাবুকে জর্জরিত স্বামী স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরসহ দুই শতাংশ জমি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন।
উপার্জন বাড়াতে ছেলে হাঁস-মুরগি পালনের পাশাপাশি শাকসবজি চাষ করে সংসারে বাড়তি আয় করছেন বলেও জানান তারা। এ দম্পতির মতো একই এলাকায় ১৫০টি পরিবারকে মুজিব বর্ষের ঘর প্রদান করা হয়। উপহারের এ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য আধাপাকা ঘরে থাকছে ২টি থাকার কক্ষ, ১টি রান্নাঘর, ১টি টয়লেট ও ১টি বারান্দা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, বরাদ্দের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী জমি নির্বাচন করে গুণগতমান বজায় রেখে ঘর গুলো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গৃহহীনদের একটি টেকসই ও মানসম্মত ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য আমরা সবসময় তদারকি করছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন,মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভূমিহীন ও গৃহহীন দারিদ্র্য পরিবার গুলোর জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে আধাপাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় পর্যায়ে ২৮০টি ঘরের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন।