September 25, 2023, 2:07 am

নোটিশ:
নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন
সংবাদ শিরোনাম:
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ঝিনাইদহে বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার রাস্তা প্রশস্তকরণ সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে মহাদেবপুর কলাপাড়ায় বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে প্রেসক্লাব চত্তরে মানববন্ধন সুদের টাকা দিতে না পারায় কৃষককে শিকলে বেঁধে নির্যাতনকারী, গ্রেফতার ০১ ডিবি পুলিশের অভিযানে গাঁজা,ইয়াবা দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার সুদের টাকা না দেয়ায় দিনমজুরকে শিকলবন্দী বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির কলাপাড়া উপজেলার শাখার আহবায়ক কমিটি গঠন ঈশ্বরদীতে আজকের দর্পণ পত্রিকার ৯ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত ঈশ্বরদীতে দৈনিক বিজয় পত্রিকার ৭ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস সন্ন‍্যাসী হতে চেয়েছিলেন

আব্দুল্লাহ হক
বিশেষ প্রতিনিধি :স্বামীজী লিখেছেন : প্রত‍্যেক জীব শক্তি প্রকাশের এক-একটি কেন্দ্র। পূর্বের কর্মফলে সে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে, আমরা তাই নিয়ে জন্মেছি।

প্রণম‍্য গবেষক শঙ্করীপ্রসাদ ‌বসু তাঁর সুভাষচন্দ্র বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থে বলেছেন — তিনি সেই ক্ষণজন্মা পুরুষ, যিনি প্রথম জীবনে মোক্ষমার্গের অনুসারী পরে তাকে ত‍্যাগ করে পরিণত যৌবন থেকে — ভারতীয় ‌ইতিহাসে ধর্মমার্গী মহাবীর অর্জুনের ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর কাছে ভারতের ধর্মক্ষেত্র — কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণের ভূমিকা নিয়েছিলেন — স্বামী বিবেকানন্দ।

স্বামীজীর ত‍্যাগের মন্ত্রে সুভাষের জীবন উদ্বেলিত ‌হয়ে উঠেছিল যুবা বয়সেই।

কলেজে পড়তে পড়তেই মনে তোলপাড় আকুতি — আর নয়, এবার বেরিয়ে পড়তে হবে গুরুর সন্ধানে — তাঁর বয়স তখন ১৭ বছর। তখন একটা অভাবিত ঘটনা ঘটে তাঁর জীবনে।

দূর সম্পর্কের ‌এক ‌আত্মীয় যুবক এসেছিলেন কটকে। সুভাষ একদিন গেলেন তাঁর কাছে।

যুবকটি ছিলেন ‌স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত। তাঁর টেবিলে রাখা ছিল বিবেকানন্দের লেখা অনেক গুলো বই। সুভাষ বই ‌গুলি ‌পড়তে ‌শুরু করলেন — এক নতুন দিগন্ত খুলে গেল ‌তাঁর সামনে।

ধর্মে ধর্মে কোনও ভেদ নেই;
দয়া নয় সেবা, ত‍্যাগ, ব্রহ্মচর্য।

দরিদ্র অবহেলিত মানুষের সেবাই যে পরম কর্তব‍্য, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ রইল না তাঁর।

সন্ন‍্যাসী হওয়ার বাসনা — প্রবল হয়ে উঠল তাঁর মনে। কিন্তু সন্ন্যাসী হতে গেলে প্রয়োজন একজন সদগুরুর।

তিনি শুনেছিলেন উত্তর – পশ্চিম ভারতে এমন সন্ন্যাসী আছেন, যাঁরা প্রকৃত পথের সন্ধান দিতে পারেন।

তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন, দু লাইনের লেখা একটি পোষ্টকার্ডে চিঠি দিয়ে।

উত্তর ভারতের সব কটি তীর্থ তিনি ঘুরলেন, সঙ্গে দু-জন বন্ধু ‌ছিলেন। শুরু হল পরিব্রাজক ‌সুভাষ চন্দ্রের হিমালয় যাত্রা। এ যেন স্বামী বিবেকানন্দের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই পরিব্রাজক বেশে আর ‌একজন ভারত পথিকের তীর্থ যাত্রা।

লছমনঝোলা, হৃষিকেশ, হরিদ্বার, গয়া, মথুরা, বৃন্দাবন অনেক ‌তীর্থে ঘুরলেন। বৃন্দাবন হয়ে সুভাষচন্দ্রেরা এলেন বারাণসী তে।

সেখানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের দুটি ‌শাখাকেন্দ্র পাশাপাশি অবস্থান করছে।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম সভাপতি ছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ, যিনি শ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় রাখাল নামে পরিচিত, যাঁকে স্বামী বিবেকানন্দ ‘রাজা’ বলে ডাকতেন।

সুভাষচন্দ্র লিখেছেন, “বারানসীতে …. স্বামী ব্রহ্মানন্দ আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানালেন, তিনি আমার বাবা ও ‌পরিবারের অনেককেই চিনতেন। এখানে আমরা কয়েকদিন রইলাম।”

সেই সময়ে ‌‌একদিন নিজের মনোগত বাসনা প্রকাশ করে সুভাষ, স্বামী ব্রহ্মানন্দের কাছে সন্ন্যাস প্রার্থনা করেন।

সুভাষের প্রার্থনা শুনে সিদ্ধসাধক স্বামী ব্রহ্মানন্দ সেই তরুণের তেজোদৃপ্ত মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে সম্ভবত অনাগত ভবিষ্যতের এক মহানায়কের আবির্ভাব লগ্নকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন …..

এই ঘটনার অল্প দিন পরে, সুভাষচন্দ্রের দেশ সেবা তথা রাজনীতির প্রভাব দেখা যায়।

স্বামী ব্রহ্মানন্দের দর্শনে সুভাষচন্দ্র অপার শান্তি পেয়েছিলেন। তাঁর তৃষিত বুকে শান্তিবারিধারা নেমে এসেছিল।

তিনি বলেছিলেন, “কৃপা যে পায়, তার জীবন বদলে যায়ই। ….. আমিও পেয়েছি এ কৃপার আভাস।”

বন্ধু দিলীপকুমার রায়ের দুহাত চেপে ধরে বললেন, “ঐ রাখাল মহারাজই আমাকে কাশী থেকে ফিরিয়ে পাঠান, বলেন, আমাকে দেশের কাজ করতে হবে।”

সন্ন্যাসজীবন নয়, অন্তরে বৈরাগী থেকে দেশের কাছে তাঁকে আত্মোৎসর্গ করতে হবে — এই ছিল সুভাষের প্রতি স্বামী ব্রহ্মানন্দের উপদেশ।

সুভাষচন্দ্রের অগ্রজ সুরেশচন্দ্র বসু স্বামী শঙ্করানন্দের মুখে শুনেছেন,

“একদিন বারাণসীর মিশন বাড়িতে স্বামী ব্রহ্মানন্দ যখন বসেছিলেন, তখন মহারাজ দেখতে পান একটি ছেলে এসে ঢুকলো। মহারাজ বললেন, জানকীবাবুর ছেলে মনে হচ্ছে। যদি তাই হয়, তবে ছেলেটির যেন যথাযথ দেখাশোনা করা হয়।

বিকেলবেলা মহারাজের কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে — তিনি তাকে গৃহে ফিরে যাওয়ার উপদেশ দেন এবং বলেন, — তাকে তাঁদের মত সন্ন্যাস নিতে হবে না। দেশ তাঁর কাছে প্রভূত জিনিস প্রত্যাশা করছে।”

স্বামীজীর বাণী তাঁর অন্তরে অগ্নির স্ফুলিঙ্গের মত সঞ্চার করেছিল প্রেরণা আর উদ্দীপনা।

স্বামী ব্রহ্মানন্দের অধ্যাত্মশক্তির কৃপা মনকে দিল শক্তি, ধ্যানসন্জাত স্থিরলক্ষে অবিচলতা আর বৈরাগ্যের আদর্শ।

অন্তরে যেন অনুরণিত হলো, “কে তুমি বাজালে নবীন রাগেতে ভারতের প্রাণবীণা।”

স্বামী বিবেকানন্দেরই এক গুরুভাইয়ের নির্দেশে, সন্ন‍্যাস গ্রহণের সংকল্প ত‍্যাগ করে ঘরে ফিরে এলেন — সুভাষচন্দ্র।

.

নিউজটি শেয়ার করুন

© All Rights Reserved sokolerbarta.com