December 1, 2023, 10:49 pm
নিউজ ডেস্ক:
নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিকরা। বিগত ২০১০ সাল থেকে অবৈধ বিদেশীদের নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সহস্রাধিক আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের সদস্য দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের বেশিরভাগই আফ্রিকান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত দুই মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের শতাধিক বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। তারা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে ১০টি দেশের সহস্রাধিক অপরাধীর তালিকা তৈরি করে অভিযান শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশী নাগরিকদের অপরাধ করার সঙ্গে সহায়তাকারী দেশীয় অপরাধী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, এসবি। পাশাপাশি বিদেশীদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। বিদেশীদের কাছে বাসা ভাড়া দেয়ার সময় বাড়ির মালিককে অবশ্যই তার পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখতে হবে। একই সাথে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকেও অবহিত করতে হবে। থানায় ওই বিদেশীর যাবতীয় তথ্য রাখা হবে। অন্যথায় বিদেশী নাগরিককে বাসা ভাড়া দেয়া বাড়িওয়ালাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্রমতে, আর্ন্তজাতিক অপরাধ চক্রের সদস্যরা মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, এটিএম কার্ড তৈরি, জাল ডলার, মাদক, মানবপাচারসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত। তারা জাল এটিএম কার্ড, ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড তৈরি করার এদেশীয় একাধিক চক্র গড়ে তুলেছে। ওসব চক্রের সহায়তায় বিদেশীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশীদের মধ্যে আফ্রিকানদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে বহু বিদেশী গ্রেফতার হয়েছে। যার মধ্যে আফ্রিকান সবচেয়ে বেশি। এখনো ৫ শতাধিক বিদেশী কারাগারে রয়েছে। যাদের মধ্যে শুধু আফ্রিকানের সংখ্যাই সাড়ে ৪শ’রও বেশি। আর বিদেশী নাগরিক হওয়ার কারণ ছাড়াও আইনের নানা ফাঁকফোকরে গ্রেফতারকৃত বিদেশী নাগরিকদের অধিকাংশই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত আফ্রিকানদের সর্ম্পকে তদন্ত করতে গিয়েও নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ গ্রেফতারকৃত অধিকাংশ আফ্রিকান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তাদের পাসপোর্ট বা বাংলাদেশে প্রবেশের বৈধ কোন কাগজপত্র পাওয়া যায় না। ফলে তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করা কঠিন পড়ে। তদন্তে দেখা গেছে, বিমানবন্দর হয়ে বৈধভাবেই আফ্রিকানরা এদেশে প্রবেশ করে পাসপোর্টে উল্লিখিত সময় পর্যন্ত বৈধভাবেই বসবাস করে। তারপর তারা ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন না করেই অবৈধভাবে বসবাস করতে থাকে। মূলত নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার উদ্দেশেই তারা অবৈধভাবে এদেশে বসবাস করে। তাছাড়া অনেক আফ্রিকান অপরাধ করার উদ্দেশেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেই পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র গায়েব করে ফেলে। যে কারণে তাদের সর্ম্পকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে চ্যান্সেলর অফিস ও দূতাবাস মিলিয়ে বিশ্বের ৪৮টি দেশের অফিস রয়েছে। ওসব অফিসের অধিকাংশই রাজধানীর গুলশান এলাকায় অবস্থিত। বাদবাকি সবই রাজধানীর বনানী ও ভাটারা থানা এলাকায় অবস্থিত। কোনো বিদেশী গ্রেফতার হলে অফিসিয়ালি বিষয়টি যার যার দেশের দূতাবাস বা চ্যান্সারি অফিসকে জানানো হয়। তবে এদেশে যেসব দেশের দূতাবাস বা চ্যান্সারি অফিস নেই, সেসব দেশের নাগরিক গেস্খফতার করা হলে তাদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে মিয়ানমার, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। আর চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকানরা। গ্রেফতারের পর অনেক বিদেশী নাগরিকই সাজার মেয়াদ শেষে ছাড়া পায়। কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ মুক্তিপ্রাপ্তদের অনেকেই যার যার দেশে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের ফেরত নিতে ওসব দেশ তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারপরেও তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সূত্র আরো জানায়, এদেশে অবৈধভাবে বা বৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশী প্রতারক চক্রের প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতারের পর বিদেশী নাগরিকের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।গত তিন মাসে প্রায় ১ হাজার বিদেশীর ওপর অনুসন্ধান ও নজরদারি করা হয়। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডাটাবেজ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২ লাখ বিদেশী অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে ১৭ হাজার আফ্রিকানসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছে, যারা দেশের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের মধ্যে সহস্রাধিক বিদেশী নাগরিককে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার তথ্য ও তালিকা পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের ওপর যথাযথ নজরদারি নেই। অবৈধ বিদেশীরা কোথায়, কী ধরনের কাজ করছে, অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিনা সেই বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি বা আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণপূর্বক পদক্ষেপ নেয়ার তেমন উদ্যোগ নেই। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী ১১ হাজার বিদেশীকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদেরকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসব নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোন উদ্যোগ নেই। কিছু দেশের দূতাবাসও বাংলাদেশে নেই।
তাই তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া জটিল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে আফ্রিকাসহ নানা দেশের নাগরিক ভিসা নিয়ে বৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন, এমন ১১ হাজার নাগরিকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যাদের ভিসা এবং পাসপোর্ট কোনটিরই মেয়াদ নেই। তাদের কিছুসংখ্যক অপরাধে জড়িয়ে কারাগারে বন্দী রয়েছে আবার কিছুসংখ্যক অবৈধভাবে বসবাস করছে। করোনাভাইরাসের সুযোগ নিয়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে ওসব অপরাধীরা প্রতারণার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তৎপরতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
এদিকে বিদেশী অপরাধীদের প্রসঙ্গে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, বিদেশী নাগরিকদের ওপর সঠিক মনিটরিং হয় না। এমন সুযোগে অনেক বিদেশী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করে। পাশাপাশি তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ওসব বিদেশীরা অনায়াসে বাসা ভাড়া, মোবাইল ফোন কিনে এদেশীয় সিমকার্ড ব্যবহার করে। এমনকি বাংলাদেশের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত করে থাকে। অথচ এসব সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানোর কথা। বিদেশীরা তার ধারই ধারে না। বর্তমানে দেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশীদের ওপর নজরদারির পাশাপাশি গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এণ্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানান, বিদেশীদের এদেশের সুযোগ সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দেয়া আছে। বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে মোবাইলের সিমকার্ড কেনাসহ সবকিছুই নিয়মের মধ্যে করতে হয়। কিন্তু অনেক বিদেশীই তা মানে না। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করা, ইমিগ্রেশন ও সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করার কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, চলতি বছর শুধু সিআইডির হাতেই বেআইনী কর্মকাণ্ডসহ নানা প্রতারণার দায়ে শতাধিক বিদেশী গ্রেফতার হয়েছে। অন্য এজেন্সির হাতেও অনেক গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের পর পরই যার যার দেশের বাংলাদেশস্থ দূতাবাস বা চ্যান্সারি অফিসকে তাদের গ্রেফতার নাগরিক গ্রেফতারের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়। আর যারা জামিন পায় তাদের অন্যান্য সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে