December 1, 2023, 2:20 pm

নোটিশ:
নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন
সংবাদ শিরোনাম:
তেতুলিয়ায় নিখোঁজের, ৫ দিন পর, যুবকের মরদেহ উদ্ধার একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে,পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে নৌপুলিশ অভিযান, আটক-২ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা মার্কা) আজ সন্ধ্যায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হচ্ছে পার্বতীপুরে কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ বিএনপির আরও ১০ নেতাকর্মী আটক যুবদল নেতার বাড়িতে হামলা मेला लखदाता सरकार, काकी गांव रामा मंडी, जालंधर, बूटा राम ਮੇਲਾ ਲੱਖ ਦਾਤਾ ਸਰਕਾਰ ਦਾ, ਕਾਕੀ ਪਿੰਡ ਰਾਮਾ ਮੰਡੀ, ਜਲੰਧਰ ਬੂਟਾ ਰਾਮ পটুয়াখালী ৪ আসনে আ’লীগের মনোনয়নে আশাবাদী দুই ডজন হেবিওয়েট প্রার্থীরা মতলব উত্তরে অটোরিকশার ধাক্কায় স্কুলছাএী নিহত

নন্দীগ্রামে জায়গা দখল নিতে সংখ্যালঘুদের মারধর, মাথায় হাসুয়ার কোপ

মিজানুর রহমান,স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার নন্দীগ্রামে জায়গা দখল নিতে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের বৃদ্ধ মা ও ছেলেকে অমানবিক মারধর ও ছেলে নয়ন চন্দ্র মহন্তকে ধারালো হাসুয়া দিয়ে মাথায় কোপ মেরে রক্তাক্ত করে ২শতক জায়গা নেটজাল দিয়ে বেড়া দিয়ে জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে এক মুসলিম পরিবারের বিরুদ্ধে। এমনকি মুসলমান পরিবারটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারকে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে বলেছেন, তোরা হিন্দু, তোদের জায়গা বাংলাদেশে না, তোরা ইন্ডিয়া চলে যা। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শ্রী নয়ন চন্দ্র মহন্ত।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোরের সিংড়া উপজেলার কইগ্রাম গ্রামের ওবায়দুল ইসলাম গত ২/৩ বছর পূর্বে তার শশুর বাড়ি নন্দীগ্রাম পৌরসভার অন্তর্গত ওমরপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ৭শতক জায়গা ক্রয় করে বাড়ি নির্মান করে বসবাস করে আসছিল। গত ১ সেপ্টেম্বর ওবায়দুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তাদের ক্রয়করা ৭শতক জায়গার সাথে সংখ্যালঘু পরিবারের ২শতক জায়গা নেটজাল দিয়ে বেড়া দিয়ে জবর দখল করছিল। এমন সময় শ্রী নয়ন চন্দ্র মহন্ত বেড়া দেওয়ার কারন জানতে চাইলে ওবায়দুল ইসলাম জায়গাটির দখলদার দাবী করেন। প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে নয়ন চন্দ্র মহন্তকে মারধর শুরু করে। ছেলে নয়ন চন্দ্রকে বাঁচাতে তার বৃদ্ধ মা এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর শুরু করে। মারধরের এক পর্যায়ে ওবায়দুল ইসলাম ধারালো হাসুয়া দিয়ে নয়ন চন্দ্র মহন্তের মাথায় কোপ মেরে রক্তাক্ত করে। এসময় আশেপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। পরে মুসলমান পরিবারটি তার লোকজন নিয়ে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে জায়গাটি বেড়া দিয়ে দখল নেয়। এমনকি চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে ভর্তি হলে প্রানে মেরে ফেলার হুমকিও প্রদান করে। ভয়ে ভুক্তভোগী আহত নয়ন চন্দ্র মহন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় মাথায় ৪টি শেলাই দিয়ে এবং বৃদ্ধ মায়ের মুখ চোখ রক্তাক্ত জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়ি চলে আসে। এছাড়াও মুসলমান প্রভাবশালীদের ভয়ে নয়ন চন্দ্র মহন্ত থানায় গিয়ে সামান্য ঝগড়া ও মাথায় ৪টি শেলাই উল্লেখ না করে সামান্য জখম উল্লেখ করে প্রহসন মূলক অভিযোগ করতেও বাধ্য হয়। কয়েক দিন পর গোপন সংবাদের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পারেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন। তাৎক্ষনাত পুলিশ পাঠিয়ে সংখালঘু পরিবারকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন এবং থানায় ডেকে নিয়ে সত্য ঘটনা মূলে পুনরায় অভিযোগ নেন। থানার (ওসি) তদন্ত জামিরুল ইসলাম অভিযোগটির তদন্ত ভার গ্রহন করেন। তদন্ত শেষে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে লিখে মামলার ধারা বসিয়ে বাদী নয়ন চন্দ্র মহন্তের কাছ থেকে আবার পুনরায় এজাহারে সই নিয়ে তার ভোটার আইডির ফটোকপিসহ এজাহার গ্রহন করেন।

ভুক্তভোগী নয়ন চন্দ্র মহন্ত বলেন, থানায় মামলা হচ্ছে খবর পেয়ে ওমরপুর গ্রামের মুসলিম প্রভাবশালী নেতা পৌর ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ফেরদৌস আলম চিকিৎসা খরচ নিয়ে মিমাংসার প্রস্তাব দেন এবং শক্রতা বাড়াতে নিষেধ করেন। সেই সাথে থানায় গিয়ে ওসি স্যারকে বলতে বলেন মিমাংসা করার কথা। নেতা ফেরদৌসের কথা মতো আমি ওসি স্যারকে মিমাংসার কথা বলি। ওসি স্যার বলেন, তোমার কাছে যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর। তবে কাউকে ভয় পাবেনা। মিমাংসা না হলে আমাকে জানাবে, মামলা করে দিবো। এরপর ২দিন পেরিয়ে গেলেও নেতা ফেরদৌস মিমাংসা করে দিচ্ছেনা। তাকে মিমাংসার কথা বললে সে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। বলে চিকিৎসা খরচ ২ হাজার টাকা দিচ্ছি নিয়ে চুপ চাপ থাক। মূলত আমরা ওমরপুর গ্রামে মাত্র ২টি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার বসবাস করি। পুরো গ্রাম মুসলমান। কি করবো বুঝতে পারছিনা।

এবিষয়ে, আওয়ামীলীগ নেতা ফেরদৌস আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত ওবায়দুল ইসলাম সম্পর্কে আমার ভাস্তি জামাই। সে ভুল করেছে। বেড়া তুলে সংখ্যালঘুদের জায়গা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা খরচ বাবদ ২ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি। তারা টাকা না নিয়ে ওসি স্যারকে ফোন করে বলেছে তাদের অনেক খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা নিয়ে দেন। ওসি স্যার আমাকে ফোন করে বললো ভুক্তভোগী পরিবারটি গবীর, বিবাদীকে ৩ হাজার টাকা দিতে বলো, নেতা হিসেবে তুমি ১ হাজার টাকা দাও আর আমি ১ হাজার টাকা দিচ্ছি। আমি নয়ন চন্দ্রকে বলে দিয়েছি ওসির কাছে ফোন করেছিস না, যা ওসির কাছ থেকেই চিকিৎসার খরচ নে।

উক্ত বিষয়ে, অভিযুক্ত ওবায়দুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা ভুল করেছি। তাদের জায়গা তাদের ফেরত দিয়েছি।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঔক্য পরিষদের নন্দীগ্রাম উপজেলা শাখার সভাপতি তীর্থ সলিল রুদ্রের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘু বলে মুসলমানরা আমাদের উপর নির্যাতন চালাবে, আমাদের জায়গা জমি জোর করে দখল করবে, প্রতিবাদ করলে হালমা চালাবে, কুপিয়ে রক্তাক্ত করবে, বাংলাদেশে আমাদের জায়গা নেই বলবে, ইন্ডিয়া চলে যেতে বলবে, আর আইনের আশ্রয় নিলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে এসব আর মেনে নিবোনা। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। সেই সাথে ঘোষনা করছি ওমরপুর গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে প্রয়োজনে আমার সংগঠন রাস্তায় নামবে।

এবিষয়ে, থানার (ওসি) তদন্ত মো, জামিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। অভিযুক্ত মুসলমান পরিবার তাদের অন্যায় স্বীকার করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহন করে মামলা গ্রহনের জন্য ওসি স্যার কে সুপারিশ করেছি।

উক্ত বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ২শতক জায়গা দখল নিতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মা ও ছেলেকে রক্তাক্ত করার অভিযোগটি তদন্ত করে এজাহার হিসেবে গ্রহন করা হয়েছিল। তবে বাদী সংখ্যালঘু পরিবারটি আমাকে মামলা না নিতে অনুরোধ করে এবং স্থানীয় ভাবে মিমাংসার প্রস্তাব দেয়। এই কারনে এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহন করা হয়নি। বাদী যদি চায় মামলা হবে।

২২/০৯/২০২৩ইং
নন্দীগ্রাম(বগুড়া)

নিউজটি শেয়ার করুন

© All Rights Reserved sokolerbarta.com