October 2, 2023, 4:22 am
মোঃরুমন হোসেন, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার ইবি থানার আব্দালপুরে কাঠ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি আনোয়ার হোসেন মলিক। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মহাসিন হাসান এই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে আনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, আনোয়ার হোসেনের দেওয়া জবানবন্দিতে রেজাউল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের দেড়িপাড়া মাঠে রেজাউল ইসলাম (৩২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। রেজাউল ইসলাম আব্দালপুর গ্রামের মসলেম হকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী।
আসামি আনোয়ার হোসেন মলিক পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। আনোয়ার হোসেন পশ্চিম আব্দালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন মাস্টারের মোটরসাইকেল চালানোর কাজ করে আসছিল প্রায় ৭—৮বছর।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি আনোয়ার হোসেন মলিক বলেন, আমি মোঃ আনোয়ার হোসেন মলিক। কৃষিকাজ করি। আমি দীর্ঘদিন যাবত পশ্চিম আব্দালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন মাস্টারের মোটরসাইকেল চালানোর কাজ করি। আনুমানিক ৭—৮বছর হবে। আমি চেয়ারম্যানের সাথে রাতে ঘুম বাদে সব সময় থাকতাম। সে যেখানে যেতে চাইত সেখানে আমি নিয়ে যেতাম। প্রায় দুই বছর আগে আমাদের গ্রামের ময়নুউদ্দিন বিশ্বাস এলাকায় কাইজ্জা—গন্ডগোলে মারা যায়। কিছুদিন পর মঈনুদ্দিনের ছেলে হালিম জানতে পারে যে তার বাবাকে রেজাউল নামের এক ব্যক্তি হত্যা করেছে। রেজাউলের বাড়ি টেকপাড়া (পশ্চিম আব্দালপুর)। হালিম পরবর্তীতে স্বপন চেয়ারম্যানের কাছে এসে তার পিতা হত্যাকারীর কথা জানায়। হালিম স্বপন চেয়ারম্যানকে বলে যে, কাকা আমার বাপকে হত্যা করে রেজাউল বুক উচু করে ঘুরে বেড়াবে আর আমরা কিছু বলতে পারব না। চেয়ারম্যান সাহেব তখন হালিমকে বলে, চুপ থাক আমি বিষয়টা দেখবো। চেয়ারম্যান সাহেব এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের গ্রামের দিপু চেয়ারম্যানের আপন ভাই সহিদুল, সেন্টু ও মনিরুলকে ডাকে। সকাল ১০টার দিকে ওনারা সবাই বিশ্বাস পাড়া মাদ্রাসার পাশে মুরগির ফার্মের মধ্যে মিটিং করে। ওই সময় রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তখন শহিদুল বলে, রেজাউলকে মারতে হলে আমরা নিজেরা মারলে হবে না, বাইরের লোক দিয়ে তো ভালো খরচ পাতি লাগবে। চেয়ারম্যান সাহেব বলে ঠিক আছে ব্যাপারটা আমি তাহলে দেখতেছি। এই বলে চেয়ারম্যান সাহেব হরিনাকুন্ডু থানা (ঝিনাইদহ) ভায়না ইউনিয়নের সমীর চেয়ারম্যানকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে তিন জন সাহসী লোক চাই। সমীর চেয়ারম্যান স্বপন চেয়ারম্যানকে জানাই যে লোক নিলে তো ভালো খরচ পাতি দেওয়া লাগবে। স্বপন চেয়ারম্যান বলেন, ওটা আমি দেখবো। রেজাউলকে হত্যার আগের দিন স্বপন চেয়ারম্যান, দিপু, সহিদুল, সেন্টু, মনিরুল, রনক, সবুজ ও মাসুদরা মিলে রাতের বেলা মাদ্রাসার পিছনে মিটিং হয়। মিটিংয়ে সহিদুলকে বলা হয় সে যেন পরদিন সারাবেলা রেজাউলকে ফলো করে। রনক, মাসুদ ও সবুজকে (হায়ার করার লোক) বলা হয় তারা যেন পরদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে লক্ষীপুর ছোট ব্রিজের পাশে থাকে। পরিকল্পনা মতো ঘটনার দিন রনক, মাসুদ ও সবুজ লক্ষ্মীপুর ব্রিজের কাছে সময় মতো চলে আসে। অন্যদিকে সেন্টু, মনিরুল ও দীপুরাও ব্রিজের কাছে যাই। অপরদিকে, সহিদুল চেয়ারম্যানকে ফোন করে বলে যে, পাওয়া গেছে আপনি মলিককে নিয়ে ১১মাইল মাঠে যান। এই কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে নিয়ে ১১মাইল মাঠে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি রেজাউলকে রনক, সবুজ, সেন্টু, মনিরুল ও দিপুরা মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে। ২০ মিনিটের মধ্যে মারা গেলে শহিদুল চেয়ারম্যান সাহেবকে বলে যে, ভাই কাজ হয়ে গেছে টাকা দেন। এরপর চেয়ারম্যান সাহেব ৫০ হাজার টাকা সহিদুলকে দেয়। সহিদুল সে টাকা রনক, মাসুদ ও সবুজকে দিয়ে তাদের দ্রুত চলে যেতে বলে। অস্ত্রপাতি নিয়ে সহিদুল মাঠ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। আমি চেয়ারম্যানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। চেয়ারম্যানকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আমি আমার বাড়িতে চলে আসি।