December 1, 2023, 12:49 pm
প্রতিবেদক এম তানভীর আলম:
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। ২০ অক্টোবর বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
জানা যায়, উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের ৬নং সেনেরচর, ও সাপমারা চরেরগাও এবং ভাষানিয়া দরিচর নামে চারটি বালু মহাল রয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ১৪২৭ বাংলা সনের (এক বছরের জন্য) ভূইয়া ট্রেডার্স ও নার্গিস ট্রেডার্স নামে পৃথক প্রতিষ্টানকে দু’টি বালু মহাল ইজারা দেয়। ইজারদাররা দিনেরবেলা নির্দিষ্ট এলাকায় বালু উত্তোলন করলেও রাতে গ্রাম এবং ফসলি জমির কাছাকাছি এসে বালু উত্তোল করে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ফলে মেঘনা নদীর তীরে স্থাপিত বাড়ি-ঘরসহ নানাস্থাপনা ভাঙ্গনের করলে পড়ে। বসতভিটা হারিয়ে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার্থে বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে দফায় দফায় মানববন্ধন, ঝারু মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় এলাকাবাসী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন-নিবেদন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এর আগে ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল রামপ্রসাদচর গ্রামের জনৈক মহসীন নামে এক ব্যক্তি বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করলে ১১ এপ্রিল শুনানীতে মাননীয় হাইকোর্ট বালু উত্তোলন না করার জন্য ওই সময় স্থানীয় জেলা এবং পুলিশ প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
কিন্তু বালুদস্যু সিন্ডিকেট হাইকোর্টের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে। এরপর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথস সপ্তাহে আবার হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন মহসীন । মাননীয় হাইকোর্ট গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২টি ইজারা বাতিলসহ আশপাশের এলকায় বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ এনিয়ে চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির গং বালু উত্তোলন বন্ধের আবেদন করেন হাইকোর্টে । ২০ অক্টোবর আদালত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নার্গিস ট্রেডার্সকে বালু উত্তোলন না করার জন্য স্থগিতাদেশ দেন।
মাননীয় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্তেও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ”বালুদস্যু সিন্ডিকেট” বালু উত্তোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর পক্ষ্য থেকে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ইকোনোমিক জোন, স্থানীয় বাজার, মসজিদ ও গ্রামের পর গ্রাম মেঘনা নদী ভাঙ্গনের আতঙ্কে এলাকার মানুষ দিনযাপন করছে। নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার্থে স্থানীয় লোকজন দফায় দফায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন-নিবেদন করে আসছে।
মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রবীর কুমার রায় বলেন, বালুমহাল স্থগিতের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি, অফিসিয়াল ভাবে আদেশ এখনো পাইনি। আর পেরিফেরি এলাকার সীমানা লংঘন করায় আগে কয়েক বার মোবাইল কোর্টের মাধমে ও অনেক ব্যাক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। ২৫অক্টোবর সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও মেঘনা থানার(অফিসার ইনচার্জ)ওসি আব্দুল মজিদ ও সার্ভেয়ারসহ সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্দিষ্ট সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছেন।
মেঘনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রতন সিকদার বলেন, শুনেছি একপক্ষের করা রিটে নার্গিস টেডার্সের নামে বালু উত্তোলনে স্থগিতাদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। কিন্তুু সিন্ডিকেটের দল আদালতের আদেশ-নির্দেশকে তোয়াক্কা করছে না। তারা চোরাপথে রাতে বালু উত্তোলন করছে। এখানের সকল বালুমহাল সরকার বন্ধ করে দিলে তবেই আর অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার কোন সুযোগ থাকবে না।